গারো অঞ্চলের বনে আগুনের পরিকল্পিত ছোবল, সংকটে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য
শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ে প্রতিদিনই লাগানো হচ্ছে আগুন। দুর্বৃত্তদের লাগানো এই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে বনভূমির ঝরাপাতা, গুল্মলতা, নতুন চারাগাছ আর বনজ কীটপতঙ্গ। চৈত্রের খরতাপে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আগুন, হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
সীমান্ত সড়কের দু’ধারে শাল-গজারি বনের ভেতর থেকে উঠছে কুণ্ডলী ধোঁয়া। আগুন লাগার খবর পেলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে, তবে এক প্রান্তে আগুন নেভানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যপ্রান্তে আবার লাগানো হচ্ছে আগুন। এতে করে বিপাকে পড়েছে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাতের আঁধারে গাছ চুরির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বালু-পাথরের অবৈধ ব্যবসার পথ সুগম করতেই সৃষ্টি করছে আতঙ্ক। এতে করে ধ্বংস হচ্ছে বনের নতুন চারাগাছ ও বসতি গড়ে তোলা কীটপতঙ্গ।
রাংটিয়ার বাসিন্দা প্রশ্ন মারাক বলেন, “বনে আগুন লাগলে পশু-পাখি ভয়ে পালিয়ে যায়। এতে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হয়।”
গহান্ধিগাঁও এলাকার মজিবর জানান, “এই চক্রটি আতঙ্ক সৃষ্টি করে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে বন ধ্বংস হয়ে যাবে।”
শেরপুর নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘জন উদ্যোগ’-এর আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “দ্রুত এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে গারো পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।”
রাংটিয়া রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা তানবীর আহাম্মেদ ইমন বলেন, “জনবলের অভাবে বন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নেভানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”
স্থানীয়দের দাবি, বনকে রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপাশি জনসচেতনতাও বাড়াতে হবে। নইলে এক সময় হারিয়ে যাবে আমাদের গারো পাহাড়ের সবুজ ঐশ্বর্য।