ঢাকা ০৭:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
শামীম ওসমান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা, সন্তানদের সম্পদ বিবরণীর নোটিশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠায় একমত হয়েছে: আলী রীয়াজ অপরাধী যেন কেউ ছাড়া না পায়, কঠোরভাবে দমন করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝে আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন দিন: কুড়িগ্রামে রিজভী মাদরাসা আমাদের ঐতিহ্যের ধারক, এটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস কখনো ‘জাতীয় সংস্কারক’ উপাধির স্বীকৃতি চান নি: প্রেস উইং সিলেট সীমান্তে বিজিবির অভিযানে প্রায় দেড় এক কোটির চোরাই পণ্য জব্দ যশোর-চুয়াডাঙ্গা রুটে তিন দিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা সিরাজগঞ্জে মাত্র ২ মিনিটের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, লণ্ডভণ্ড ৪ গ্রাম চাকরি না পেয়ে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষে রাজবাড়ীর এনামুল হক সজিবের সাফল্য

শতকোটি টাকার কর ফাঁকিতে ইউনাইটেড গ্রুপ, জড়িত শীর্ষ পরিচালকেরা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:৩৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
  • / 21

ছবি সংগৃহীত

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড গ্রুপের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার কর ফাঁকি ও জাল নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের গুরুতর অভিযোগ। তদন্তে জানা গেছে, এস আলম গ্রুপের কাছে শেয়ার হস্তান্তরের আড়ালে ‘আন্ডারহ্যান্ড’ লেনদেনের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের আয় গোপন করে এই কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, যা দেশের করব্যবস্থায় বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ঘটনার পেছনের কাহিনি
২০১৭ সালে ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানায় ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ২২ কোটি ৭৪ লাখ শেয়ার। এ শেয়ার ব্যাংকের পর্ষদে প্রভাব বিস্তারের জন্য রাখা হলেও, এস আলম গ্রুপের চাপের মুখে তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ইউনাইটেড গ্রুপ।

প্রতিটি শেয়ারের প্রকৃত মূল্য ছিল ২০ থেকে ২৭ টাকা, অথচ তা বিক্রি করা হয় ৪৯ টাকায়। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৈষম্যের মাধ্যমে আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকা আয় করে ইউনাইটেড গ্রুপ, যা কর নথিতে দেখানো হয়নি। ফলে এ আয়ের বিপরীতে ৩০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ এনবিআরের।

এই কর ফাঁকির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইউনাইটেড গ্রুপের তৎকালীন চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) ইবাদত হোসাইন ভূঁইয়া। তিনি বর্তমানে এস আলম গ্রুপে কর্মরত রয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয়, কারসাজির পুরস্কার হিসেবে তিনিও এসআইবিএলের দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক হন।

কে কত কর ফাঁকি দিয়েছেন
এনবিআরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কর ফাঁকিতে জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন ইউনাইটেড গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা (৫৫ কোটি), বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনউদ্দিন হাসান রশিদ (২৪ কোটি), সাবেক পরিচালক খোন্দকার মইনুল আহসান (১৯ কোটি) এবং ফরিদুর রহমান খান (১৯ কোটি টাকা)।
এসব পরিচালকের পাশাপাশি আরও অনেকেই ব্যক্তি কিংবা সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার মালিক ছিলেন, যা মিলিয়ে এসআইবিএলের ৩০.৮৮ শতাংশ শেয়ার তাঁদের দখলে ছিল।

পরিবারভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়িক যোগসূত্র
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ইউনাইটেড গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজার ছেলে মইনউদ্দিন হাসান রশিদ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির এমডি। ফরিদুর রহমান খান, যিনি পরিচালক এবং ফাহাদ খানের পিতা। একইভাবে আহমেদ ইসমাইল হোসাইন ও তাঁর ছেলে মালিক তালহা ইসমাইল বারি উভয়েই গ্রুপের মালিক ও পরিচালক ছিলেন।

তাঁদের অনেকেই নেপচুন কমার্শিয়াল, নভো রিয়েল এস্টেট, শাহজী এন্টারপ্রাইজ ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড–এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।

এনবিআরের কঠোর পদক্ষেপ
ইতোমধ্যে এনবিআর ইউনাইটেড গ্রুপের সব পরিচালকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাঁদের আয়কর রিটার্ন ও সম্পদ বিবরণী তলব করেছে। প্রত্যেককে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস পাঠানো হয়েছে, যাতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, “কেন এই আয়করযোগ্য আয় রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি?”

লিখিত জবাব না পেলে কর আইনের আওতায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এনবিআর।

বিশ্লেষকদের মত
বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনাটি সাধারণ ভুল নয়, বরং এটি পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে গোপন লেনদেন এবং ইউনাইটেড গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা করব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

এ বিষয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান মইনউদ্দিন হাসান রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

নিউজটি শেয়ার করুন

শতকোটি টাকার কর ফাঁকিতে ইউনাইটেড গ্রুপ, জড়িত শীর্ষ পরিচালকেরা

আপডেট সময় ১২:৩৬:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড গ্রুপের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার কর ফাঁকি ও জাল নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিলের গুরুতর অভিযোগ। তদন্তে জানা গেছে, এস আলম গ্রুপের কাছে শেয়ার হস্তান্তরের আড়ালে ‘আন্ডারহ্যান্ড’ লেনদেনের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের আয় গোপন করে এই কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, যা দেশের করব্যবস্থায় বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ঘটনার পেছনের কাহিনি
২০১৭ সালে ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকানায় ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ২২ কোটি ৭৪ লাখ শেয়ার। এ শেয়ার ব্যাংকের পর্ষদে প্রভাব বিস্তারের জন্য রাখা হলেও, এস আলম গ্রুপের চাপের মুখে তা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ইউনাইটেড গ্রুপ।

প্রতিটি শেয়ারের প্রকৃত মূল্য ছিল ২০ থেকে ২৭ টাকা, অথচ তা বিক্রি করা হয় ৪৯ টাকায়। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৈষম্যের মাধ্যমে আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকা আয় করে ইউনাইটেড গ্রুপ, যা কর নথিতে দেখানো হয়নি। ফলে এ আয়ের বিপরীতে ৩০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ এনবিআরের।

এই কর ফাঁকির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন ইউনাইটেড গ্রুপের তৎকালীন চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) ইবাদত হোসাইন ভূঁইয়া। তিনি বর্তমানে এস আলম গ্রুপে কর্মরত রয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয়, কারসাজির পুরস্কার হিসেবে তিনিও এসআইবিএলের দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক হন।

কে কত কর ফাঁকি দিয়েছেন
এনবিআরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কর ফাঁকিতে জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন ইউনাইটেড গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা (৫৫ কোটি), বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনউদ্দিন হাসান রশিদ (২৪ কোটি), সাবেক পরিচালক খোন্দকার মইনুল আহসান (১৯ কোটি) এবং ফরিদুর রহমান খান (১৯ কোটি টাকা)।
এসব পরিচালকের পাশাপাশি আরও অনেকেই ব্যক্তি কিংবা সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার মালিক ছিলেন, যা মিলিয়ে এসআইবিএলের ৩০.৮৮ শতাংশ শেয়ার তাঁদের দখলে ছিল।

পরিবারভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়িক যোগসূত্র
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ইউনাইটেড গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ পারিবারিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সাবেক চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজার ছেলে মইনউদ্দিন হাসান রশিদ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির এমডি। ফরিদুর রহমান খান, যিনি পরিচালক এবং ফাহাদ খানের পিতা। একইভাবে আহমেদ ইসমাইল হোসাইন ও তাঁর ছেলে মালিক তালহা ইসমাইল বারি উভয়েই গ্রুপের মালিক ও পরিচালক ছিলেন।

তাঁদের অনেকেই নেপচুন কমার্শিয়াল, নভো রিয়েল এস্টেট, শাহজী এন্টারপ্রাইজ ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড–এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।

এনবিআরের কঠোর পদক্ষেপ
ইতোমধ্যে এনবিআর ইউনাইটেড গ্রুপের সব পরিচালকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তাঁদের আয়কর রিটার্ন ও সম্পদ বিবরণী তলব করেছে। প্রত্যেককে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস পাঠানো হয়েছে, যাতে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, “কেন এই আয়করযোগ্য আয় রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি?”

লিখিত জবাব না পেলে কর আইনের আওতায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে এনবিআর।

বিশ্লেষকদের মত
বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনাটি সাধারণ ভুল নয়, বরং এটি পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে গোপন লেনদেন এবং ইউনাইটেড গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা করব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

এ বিষয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান মইনউদ্দিন হাসান রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন