শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতন
শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঊর্ধ্বগতি: দিনে গড়ে ১২টি ধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত, আইনি সংস্কারের জোরালো দাবি

- আপডেট সময় ১২:০৩:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫
- / 23
দেশে শিশু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০২৪ সালে ৩৩১ জন শিশু ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪-এ। প্রতিদিন গড়ে ১২টি ধর্ষণের মামলা পুলিশের খাতায় লিপিবদ্ধ হচ্ছে, তবে বাস্তবে সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
নারী ও শিশু অধিকারকর্মীরা মনে করেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এবং আইনি জটিলতার কারণে অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বিদ্যমান আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি মাগুরার আট বছরের শিশু আছিয়ার ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। ৬ মার্চের ওই ঘটনার পর একের পর এক নির্মম যৌন সহিংসতার খবর সামনে আসতে থাকে—৭ মার্চ কুমিল্লায় প্রতিবন্ধী মেয়েকে গণধর্ষণ, ৮ মার্চ গাজীপুর ও ফরিদপুরে দুই শিশুকে ধর্ষণ, ৯ মার্চ গাজীপুরে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ, ১০ মার্চ সিলেটের বিশ্বনাথে ছয় বছরের শিশু ধর্ষণ, ১১ মার্চ সিলেটে মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, ১২ মার্চ সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ এবং ১৩ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে অপহরণের পর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। এসব ঘটনায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮ দিনে ধর্ষণের অভিযোগে গড়ে ১২টি মামলা হয়েছে। ২০২৪ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৭ হাজার ৫৭১টি মামলা দায়ের হয়, আর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতেই হয়েছে ১,৪৪০টি মামলা।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২৯৪ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৯৬ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৩১ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যার শিকার দুইজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক ভুক্তভোগী মামলা করতেও সাহস পান না, ফলে প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম জানান, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার সময় যৌন সহিংসতা বাড়ে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হলে নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। শিশু অধিকারকর্মী মনিরুজ্জামান মুকুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃঢ় পদক্ষেপ না থাকায় অপরাধীরা আশঙ্কাহীন থেকে যাচ্ছে।
আছিয়া ধর্ষণের ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়লে সরকারের জরুরি বৈঠকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করা হয়। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, ধর্ষণের মামলার তদন্ত ৩০ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে এবং বিচার ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার জন্য আইন সংশোধন করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেবল কঠোর শাস্তি নয়, দ্রুত বিচার, ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমেই এই ব্যাধির প্রতিরোধ সম্ভব।