আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে চরম সংকট বাড়ছে মৃত্যু, নেই আইনের প্রয়োগ
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি, রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের কেথাকপাড়া এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে আসা একটি বন্যহাতির আক্রমণে এক ব্যক্তি, উচসিং মারমা (৪৯) নিহত হয়েছেন। স্থানীয়রা হাতির পাল তাড়াতে গেলে হাতি তাকে আক্রমণ করে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগেও বন্যহাতির আক্রমণে একাধিক মৃত্যু ও আহতের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, মানুষের আক্রমণেও বন্যহাতির মৃত্যু ঘটছে। গত ৭ জানুয়ারি বান্দরবানের লামা উপজেলায় একটি বন্যহাতি মৃত্যুর সম্মুখীন হয়। কেউ কেউ বলেন, শিকারিরা বৈদ্যুতিক ফাঁদে ফেলে হাতিটিকে হত্যা করেছে, আবার অন্যরা দাবি করেন, হাতিটি গুলি করে মারা হয়েছে। এমনই নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বন্যপ্রাণীরা এখন মানুষের হাতে নিঃশেষ হচ্ছে।
আইইউসিএনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে এশিয়ান বন্যহাতির সংখ্যা মাত্র ২৬৮টি। সীমান্তবর্তী পাঁচটি বনাঞ্চলে ৯৩টি পরিযায়ী হাতি বিচরণ করে, তবে তাদের মৃত্যু বেড়েই চলেছে। গত এক বছরে ২২টি হাতি গুলি, বিষ প্রয়োগ বা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়া, সুন্দরবনের প্রাণীও লবণাক্ততার কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। ২০০১ সাল থেকে সুন্দরবনে ৫৫টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ১৭টি স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে। চোরা শিকার, বিষ প্রয়োগ, এবং বনভূমির ক্ষতি বাঘের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, পাহাড়ি অঞ্চলের সরীসৃপ প্রাণীরাও বিপদে। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় গত এক বছরে ১৫টি অজগর লোকালয়ে ঢুকে আটকা পড়েছে, যার মধ্যে কিছু সাপ উদ্ধারও হয়েছে। এসব ঘটনা বন্যপ্রাণীর অস্তিত্বের সংকটকে আরও তীব্র করছে।
প্রাণীবিদদের মতে, বন উজাড়, শিকার, জলাভূমির ধ্বংস, অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন এই সংকটের মূল কারণ। যদি এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে দেশের জীববৈচিত্র্য শূন্য হয়ে যেতে পারে।
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হলেও আইনের প্রয়োগে দুর্বলতা রয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, হাতি হত্যায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। এই বাস্তবতায়, দেশজুড়ে বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।