খুলনায় চিকিৎসকদের আন্দোলন: ‘ডাক্তার’ পদবি ও স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ
খুলনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এবং হাসপাতালের চিকিৎসকরা এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে না পারার দাবিতে দুই ঘণ্টার কলম বিরতি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
সোমবার (১০ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন জরুরি বিভাগের সামনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে অংশ নেন শত শত চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী। পরে, তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন, যা মেডিকেল কলেজে গিয়ে শেষ হয়।
বক্তারা জানান, দেশের মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং তরুণ চিকিৎসকরা গত ১৩ বছর ধরে ‘ডাক্তার’ পদবি নিয়ে একটি রিট মামলার নিষ্পত্তির দাবি জানাচ্ছেন। এ ছাড়া, তারা স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
পাঁচ দফা দাবি:
১. ‘ডাক্তার’ পদবি সংক্রান্ত রিট নিষ্পত্তি:
* এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না।
* বিএমডিসির উক্ত আইনের বিরুদ্ধে করা রিট ১২ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন শুধুমাত্র এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দিতে হবে।
* ২০১০ সালে সরকার ম্যাটস শিক্ষার্থীদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু করে, যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
২. ওটিসি ড্রাগ লিস্ট আপডেট:
* উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ওটিসি ড্রাগ লিস্ট আপডেট করতে হবে।
* এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া অন্য কেউ ওটিসি ড্রাগ লিস্টের বাইরের ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারবে না।
* রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো ওটিসি লিস্টের বাইরের কোনো ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না।
৩. স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসন:
* দ্রুত ১০,০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে।
* আলাদা স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করে পূর্বের মতো সপ্তম গ্রেডে নিয়োগ দিতে হবে।
* প্রতিবছর ৪,০০০-৫,০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যখাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
* চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপের বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।
৪. মানহীন মেডিকেল প্রতিষ্ঠান বন্ধ:
* সকল মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) ও মানহীন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করতে হবে।
* এসএসসি পাস করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের ‘স্যাকমো’ পদবি বাতিল করে ‘মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।
৫. চিকিৎসক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন:
* চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর আইন কার্যকর করতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতে চিকিৎসকের সংকট নিরসনের জন্য তারা দ্রুত ১০,০০০ চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন এবং প্রতিবছর ৪,০০০-৫,০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যখাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন।
তারা আরও দাবি করেছেন, মানহীন মেডিকেল প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা হোক এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর আইন প্রণয়ন করা হোক।
এই আন্দোলনের ফলে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে জরুরি বিভাগের সেবা চালু ছিল। চিকিৎসকদের এই দাবি বাস্তবায়িত হলে, স্বাস্থ্যখাতের উন্নতির আশা করছেন তারা।