০৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম :
‘জুলাই যোদ্ধা’ শনাক্তে গোয়েন্দা তদন্ত শুরু কুয়াকাটার হোটেলে ঝুলন্ত মরদেহ, স্বামী পরিচয়ে থাকা যুবকের খোঁজ নেই যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকা বৃদ্ধি: যোগ হচ্ছে ফিলিস্তিনসহ আরও ছয় দেশ ‘২৫ তারিখ ইনশা আল্লাহ দেশে ফিরছি’: তারেক রহমান হাদিকে গুলি: প্রধান আসামি ফয়সালের বাবা–মা গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার সেই মুসলিমকে ‘জাতীয় হিরো’ আখ্যা দিয়ে যা বললেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে সন্ধ্যায় ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা জনসমাগমের মধ্যে দক্ষিণখানে যুবলীগ নেতা খুন জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা গাজায় যুদ্ধবিরতি মানতে ইসরায়েলকে হোয়াইট হাউসের সতর্কবার্তা, নেতানিয়াহুকে সরাসরি বার্তা
জাতীয় নিরাপত্তা

বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে রাজনীতির ছায়া: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:০৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 124

ছবি সংগৃহীত

 

বাংলাদেশে দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকীকরণ গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে নিরাপত্তা খাতে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের বদলে রাজনৈতিক আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)-তে নিয়োগের সময় প্রার্থীদের রাজনৈতিক সংযোগ যাচাই করা হতো। এমনকি আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল (ডিআইজি) ও তার ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নিয়োগ অনুমোদন করতেন। দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতো।

সেনাবাহিনীর বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতে তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে হস্তক্ষেপ করলেও অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় কম প্রভাবিত ছিল। তবে, সামরিক বাহিনীর সিনিয়র পর্যায়ের নিয়োগ ও পদোন্নতিতেও রাজনৈতিক আনুগত্য গুরুত্ব পেয়েছে।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড দমন এবং ক্ষমতাসীনদের অপরাধে হস্তক্ষেপ না করার বিনিময়ে নিরাপত্তা বাহিনী নিজেদের অপরাধ ও দুর্নীতির দায়মুক্তি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ২৫৯৭টি কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ৭০৮টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। র‌্যাব এককভাবে ৮০০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ২২০টি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, বিচার হয়েছে মাত্র একটি ঘটনায়, যেখানে ভুক্তভোগী ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা।

জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও ঘুষ নেওয়া নিয়মিত চর্চা হয়ে উঠেছে। ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ প্রণীত হলেও বাস্তবে কার্যকর হয়নি। ১০৩ জন বন্দী নির্যাতনে নিহত হয়েছেন, কিন্তু মাত্র একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার নজির রয়েছে।

প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকীকরণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।

বিষয় :

নিউজটি শেয়ার করুন

জাতীয় নিরাপত্তা

বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে রাজনীতির ছায়া: জাতিসংঘের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপডেট সময় ১২:০৬:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

বাংলাদেশে দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকীকরণ গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে নিরাপত্তা খাতে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের বদলে রাজনৈতিক আনুগত্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)-তে নিয়োগের সময় প্রার্থীদের রাজনৈতিক সংযোগ যাচাই করা হতো। এমনকি আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল (ডিআইজি) ও তার ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নিয়োগ অনুমোদন করতেন। দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতো।

সেনাবাহিনীর বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতে তারা রাজনৈতিক অঙ্গনে হস্তক্ষেপ করলেও অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় কম প্রভাবিত ছিল। তবে, সামরিক বাহিনীর সিনিয়র পর্যায়ের নিয়োগ ও পদোন্নতিতেও রাজনৈতিক আনুগত্য গুরুত্ব পেয়েছে।

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড দমন এবং ক্ষমতাসীনদের অপরাধে হস্তক্ষেপ না করার বিনিময়ে নিরাপত্তা বাহিনী নিজেদের অপরাধ ও দুর্নীতির দায়মুক্তি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে ২৫৯৭টি কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ৭০৮টি গুমের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। র‌্যাব এককভাবে ৮০০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ও প্রায় ২২০টি গুমের ঘটনায় জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, বিচার হয়েছে মাত্র একটি ঘটনায়, যেখানে ভুক্তভোগী ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা।

জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও ঘুষ নেওয়া নিয়মিত চর্চা হয়ে উঠেছে। ২০১৩ সালে ‘নির্যাতন ও নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন’ প্রণীত হলেও বাস্তবে কার্যকর হয়নি। ১০৩ জন বন্দী নির্যাতনে নিহত হয়েছেন, কিন্তু মাত্র একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার নজির রয়েছে।

প্রতিবেদনটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, বাংলাদেশে নিরাপত্তা খাতের রাজনীতিকীকরণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি গভীরভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।