নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে উত্তাল বঙ্গোপসাগর,নীচু অঞ্চল প্লাবিত

- আপডেট সময় ০২:৪৪:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
- / 9
শ্রাবনের ঘনঘোর অমাবশ্যায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ঠ লঘুচাপটি গতকাল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের উপকূলে পৌঁছার মাঝে সংশ্লিষ্ট নীচু অঞ্চলসমুহ প্লাবিত হয়ে গেছে। গত রাতে একটানা বাতাসের তীব্র বেগসমেত জোয়ারের উঁচু পানির তান্ডব সৃষ্টি করেছে দুর্যোগের পরিবেশ।
একদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ, অন্যদিকে অমাবস্যার প্রভাবে গতকাল শুক্রবার পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় দিনের জোয়ারে নদ-নদীর পানি বেড়ে যায়। শুক্রবার সকালে পায়রা বন্দর থেকে ১১০ কিমি দূরে অবস্থান করছিল নিম্নচাপটি। স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে উপজেলার একাধিক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বসতভিটা, মাছের ঘের, পুকুর ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে দুর্ভোগে পড়েছে। কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গতকাল রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বশেষ বুলেটিনে জানিয়েছে, নিম্নচাপটি গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তত্সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থান করছিল। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে এটি প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে । পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত মেঘের চিত্র বিশ্লেষণ করে জানান, গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু করে কমপক্ষে ৩ দিন (সোমবার পর্যন্ত) বাংলাদেশের সকল জেলার উপরে পর্যায়ক্রমে বৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার খুলনা, বরিশাল, চট্রগ্রাম, ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর উপরে মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। চট্রগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর সমুদ্র উপকূলে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে । ফলে সমুদ্র ও নদীর মোহনাগুলোতে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক জানান, নিম্নচাপটি গতকাল বিকেল থেকে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এতে দুর্বল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপ ও অমাবস্যার ফলে উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার বিরাজমান আছে, তবে অমাবস্যা ও নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী একদিন স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৩ ফুটের অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বৃষ্টি ঝরেছে; তবে উজানে কোনো উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়নি। দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন কয়েকটি নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সময়ে ফেনীর মুহরি ও সেলোনিয়া নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে এবং ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এ সময়ে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরি, রহমতখালি খাল ও নোয়াখালী খাল নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। সিলেট বিভাগের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদীর পানিও সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। এসব নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পরবর্তী দুদিন বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে কলকাতা আবহাওয়া দফতর জানায়, নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে ভারতের দক্ষিণবঙ্গে। বৃষ্টি চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে উত্তর ওড়িশা হয়ে ঝাড়খন্ড ও ছত্তিশগড়ের দিকে চলে যাবে।
দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপরে
বরিশাল অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে বৃষ্টির প্রভাবে উঁচু জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে অস্বাভাবিক জোয়ারে নদী তীরবর্তী জনপদ প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বিকালে পানিতে তলিয়ে যায় নগরীর সদর রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়কসহ নিম্নাঞ্চল। নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলা নদীতীরের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের বসতঘর, রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী তাইজুল ইসলাম বিকাল ৫টায় বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীর পানি বিকাল ৩টার পর বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলায় বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ভাটা শুরু হলে নগরীর বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে যেতে পারে বলে জানান তিনি। বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মিলন হাওলাদার জানান, বেলা ৩টায় তারা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে। এটাই ছিলো দিনের সর্বোচ্চ গতিবেগ। বিকাল ৩টার আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। এমন আবহাওয়া আরও দুইতিন দিন থাকতে পারে। বরিশাল নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এবং বন্দর ও পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেন বলেন, সমুদ্রে তিন নম্বর সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।