চাকরি না পেয়ে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষে রাজবাড়ীর এনামুল হক সজিবের সাফল্য

- আপডেট সময় ০৪:২৬:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
- / 8
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির ভিমনগর গ্রামের তরুণ এনামুল হক সজিব প্রথাগত চাকরির পেছনে না ছুটে বিষমুক্ত আম চাষে গড়ে তুলেছেন অনন্য উদাহরণ। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে অন্যান্য গ্র্যাজুয়েটদের মতো তিনিও চাকরির খোঁজ শুরু করেছিলেন। তবে বহুদিন চেষ্টার পরেও চাকরি না পেয়ে মায়ের পরামর্শে নিজ এলাকার চার বিঘা জমিতে শুরু করেন আম বাগান।
প্রথম দিকে গাছে ফল এলেও মাছি-পোকার আক্রমণ এবং অতিরিক্ত কীটনাশক খরচে হতাশায় পড়েন তিনি। পরে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ শুরু করেন। এই পদ্ধতিতে চাষ করে তিনি পান কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। এখন তার বাগানের আম গুলো আকর্ষণীয়, সুস্বাদু এবং সম্পূর্ণ বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন তিনি।
বর্তমানে এনামুলের বাগানে বারি ফোর, হিমসাগর, কাঠিমন, হারিভাঙ্গা, নবাব পছন্দ, মল্লিকা প্রভৃতি জাতের আম রয়েছে। ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের ফলে আমের গায়ে কোনো দাগ পড়ে না, ওজন বাড়ে এবং দৃষ্টিনন্দন ও সুস্বাদু হয়। ফলে স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি।
তিনি জানান, আমের ওজন ১০০ গ্রাম হলে ব্যাগ পরানো হয়। এর পর আর কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এমনকি মাছি-পোকার আক্রমণও হয় না। এর ফলে ক্রেতারাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাগান থেকেই আম কিনছেন বেশি দামে।
এছাড়া তার বাড়ির পাশে আরও চার বিঘা জমিতে কমলা, মাল্টা ও কুলের মিশ্র বাগান রয়েছে। সবকিছুই তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে করছেন। তার সফলতা দেখে আশেপাশের অনেক চাষিই ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
এক স্থানীয় ক্রেতা জানান, বাজারে যেসব আম পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশিরভাগই মৌসুমের আগেই সংগ্রহ করা হয় এবং কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় পাকানোর জন্য। কিন্তু এনামুলের বাগানের আমে কোনো দাগ নেই, আকারে বড় এবং খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তাই কিছুটা বেশি দাম দিয়েও তারা এসব আম কিনছেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষের প্রথম সফল দৃষ্টান্ত এনামুল হক সজিব। এই পদ্ধতিতে ফল মাছি-পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় এবং ফলন নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব হয়। এমনকি সঠিকভাবে চাষ করা হলে এই ফল বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাষিদের নিরাপদ বিষমুক্ত ফল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করছি এবং উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এনামুল হক সজিবের মত উদ্যমী উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে তুলবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।