আকস্মিক বৃষ্টিতে তিস্তা পাড়ের বাদাম চাষে বড় ধরনের ক্ষতি, হতাশায় কৃষকরা

- আপডেট সময় ০১:১৩:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / 9
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের চর ইসরকুল এলাকার কৃষক হাসান আলী হতাশ কণ্ঠে বললেন, ‘৪০ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ করছি। সার-পানি মিলে খরচ হইছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে পানির নিচে গেছে সব। পানি না আসলে ৮-১০ মন বাদাম হইতো, ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হতো। এখন দুই মনও হবে না।’
শুধু হাসান আলী নন, একই এলাকার কৃষক ফারুক মিয়াও পড়েছেন একই বিপদে। তিনি স্থানীয় সমবায় সমিতি থেকে লোন নিয়ে ১২০ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। বীজ, পানি, সারসহ বিভিন্ন খাতে তার খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। কয়েক দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারলে লাভ হতো আরও ৭০-৮০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন সেই আশাও ভেসে গেছে বৃষ্টির পানিতে।
এই দৃশ্য শুধু চর ইসরকুল নয়, তিস্তা তীরবর্তী বেশিরভাগ চরাঞ্চলের চাষিদেরই। বাদাম, ধান ও মৌসুমি সবজি নিয়ে যারা স্বপ্ন বুনেছিলেন, হঠাৎ পানি উঠে সেই স্বপ্ন এখন ভেসে যাচ্ছে।
নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর সময়-অসময়ে বন্যা হওয়ার ফলে তিস্তার তলদেশে পলি জমে নদীর ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর তিস্তা নদী দুই কোটি টনের বেশি পলি বহন করে, যা নদীর বুক ভরাট করে ফেলছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় অঞ্চলে ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও হঠাৎ বৃষ্টিতে শুকনো নদীতে আবার পানি ফিরে আসায় চরাঞ্চলের ফসল ডুবে গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম ইচলী, কেল্লার পাড়, বাগেরহাট, পীরগাছা ও কাউনিয়া অংশের চরাঞ্চলে পানি উঠে শতাধিক চাষির ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বাদাম ক্ষেত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কৃষকরা অপরিপক্ব বাদাম তুলতে বাধ্য হচ্ছেন, যাতে একেবারেই ক্ষতির মুখে না পড়েন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বাদাম, ধান ও সবজি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কৃষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।