শ্রীমঙ্গলে করলা চাষে বিপ্লব, বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জীবন

- আপডেট সময় ০১:১০:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
- / 1
মাচায় ঝুলছে সবুজ করলা এ যেন শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের পাড়ের টং গ্রামের নিত্যদিনের চিত্র। ‘করলা গ্রাম’ নামে পরিচিত এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবার কোনো না কোনোভাবে যুক্ত করলা চাষের সঙ্গে। বছরজুড়েই কৃষকের মাঠে মেলে ধরে সবুজ সম্ভাবনা।
এখানকার অধিকাংশ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন হাইব্রিড জাতের ‘টিয়া সুপার’ করলা, যা মাত্র ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই ফলন দেয়। সময় কম, উৎপাদন বেশি এই সমীকরণেই লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। বিষমুক্ত পদ্ধতিতে চাষ হওয়ায় এখানকার করলার চাহিদাও ব্যাপক। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা ভিড় করছেন এই গ্রামে। করলা যাচ্ছে রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও অন্যান্য বড় শহরে।
চাষি ওয়াসিম মিয়া জানান, ‘সিজন অনুযায়ী টিয়া সুপার করলার চাষ করে আমরা অনেক লাভ করছি। বেকারদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। আমি প্রতি বছর ১০-১২ লাখ টাকার করলা বিক্রি করি।’
আরেক চাষি বেলাল মিয়া বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে করলা চাষ করছি। টিয়া সুপার করলার ফলন ভালো, ওজন বেশি হয়। লাভ তো হবেই। কিছু বিক্রি করেছি, কিছু এখনও বাকি।’
হবিগঞ্জের পাইকার রহিম মিয়া জানান, ‘ঢাকা ও কুমিল্লায় করলা সরবরাহ করি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে, বাজার দরও ভালো। আশা করছি ৮-১০ লাখ টাকার করলা বিক্রি করতে পারব।’
এ চাষে কৃষকদের পাশে রয়েছে লাল তীর সীড লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী জানান, ‘প্রায় এক যুগ ধরে এখানকার কৃষকেরা টিয়া ও টিয়া সুপার জাতের করলা চাষ করছেন। এই জাতের করলা ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহযোগ্য হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা ছুটে আসেন।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, ‘চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে করলা চাষ হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকার করলা বিক্রি হতে পারে। করলা চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর বিস্তৃতি বাড়ছে।’
এই গ্রাম এখন করলা উৎপাদনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কৃষি নির্ভর এ গ্রামের মানুষ দেখিয়ে দিচ্ছেন, পরিকল্পিত চাষাবাদে কিভাবে বদলে যায় জীবনের গল্প।