ঢাকা ০৮:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
শতাব্দীর আতঙ্ক ‘নর’ইস্টার’ ঝড় নিয়ে প্রকাশিত হলো চাঞ্চল্যকর সব সত্য ভালুকায় গৃহবধূ ও দুই সন্তান হত্যা: প্রধান আসামি দেবর নজরুল গ্রেপ্তার উদ্ভিদের গোপন শব্দে সাড়া দেয় পতঙ্গ ও প্রাণীরা: গবেষণায় উদ্ভিদের ভাষার রহস্য উদঘাটন বাংলাদেশের জাহাজ ও বন্দর খাতে বিনিয়োগে সিঙ্গাপুরকে আহ্বান: নৌ উপদেষ্টা শামীম ওসমান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা, সন্তানদের সম্পদ বিবরণীর নোটিশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠায় একমত হয়েছে: আলী রীয়াজ অপরাধী যেন কেউ ছাড়া না পায়, কঠোরভাবে দমন করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝে আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন দিন: কুড়িগ্রামে রিজভী মাদরাসা আমাদের ঐতিহ্যের ধারক, এটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস কখনো ‘জাতীয় সংস্কারক’ উপাধির স্বীকৃতি চান নি: প্রেস উইং

উদ্ভিদের গোপন শব্দে সাড়া দেয় পতঙ্গ ও প্রাণীরা: গবেষণায় উদ্ভিদের ভাষার রহস্য উদঘাটন

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৭:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
  • / 4

ছবি: সংগৃহীত

 

উদ্ভিদও কথা বলে তবে মানুষের মতো নয়, বরং একধরনের সংকেত বা শব্দের মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরেই এ নিয়ে সন্দেহ ছিল বিজ্ঞানীদের মধ্যে, তবে সম্প্রতি ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চাঞ্চল্যকর গবেষণায় উঠে এসেছে, গাছপালা যখন চাপে থাকে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তারা এমন শব্দ সৃষ্টি করে যা পতঙ্গ ও কিছু প্রাণী শনাক্ত করতে পারে। এমনকি এসব সংকেতের ভিত্তিতে পতঙ্গরা সিদ্ধান্তও নেয় কোথায় ডিম দেবে আর কোথায় নয়।

নোবেলজয়ী মার্কিন কৃষি বিজ্ঞানী নরম্যান বোরলগ একসময় বলেছিলেন, “গাছেরা ফিসফিস করে কথা বলে, সে কথা শুনতে হলে তাদের কাছে যেতে হবে।” নতুন গবেষণাগুলো যেন সেই কথারই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাজির করলো।

তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োসি ইয়োভেল এবং তার গবেষক দল দেখেছেন, টমেটো গাছ যখন পানিশূন্যতায় ভোগে বা কোনোভাবে চাপের মধ্যে পড়ে, তখন এক ধরনের অশ্রাব্য শব্দ তৈরি করে। এই শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তির বাইরে হলেও অনেক পতঙ্গ, বাদুড় এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী তা শনাক্ত করতে পারে। গবেষকরা লক্ষ করেছেন, এসব সংকেতে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ স্ত্রী পতঙ্গ টমেটো গাছে ডিম পাড়েনি।

অধ্যাপক ইয়োভেল বলেন, “এটাই প্রথম কোনো প্রমাণ যে, প্রাণীরা উদ্ভিদের শব্দের প্রতি সাড়া দেয়। এখন অনুমান করা হচ্ছে, সম্ভবত সব ধরনের প্রাণীই উদ্ভিদের শব্দ শুনে সিদ্ধান্ত নেয় পরাগায়ন করবে কিনা, উদ্ভিদের কাছে যাবে নাকি দূরে থাকবে।”

প্রথমে ধারণা ছিল পতঙ্গরা গাছের আকৃতি বা চেহারার ভিত্তিতে ডিম পাড়ার স্থান নির্ধারণ করে। কিন্তু এই গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা শব্দের প্রতিই বেশি সাড়া দেয়। একটি অসুস্থ বা চাপগ্রস্ত গাছ সেই শব্দ দিয়েই পতঙ্গকে সতর্ক করে দেয় যেন সেখানে ডিম না দেয়।

গবেষণার আরেক সদস্য অধ্যাপক লিলাচ হাদানি বলেন, “আমরা জানতে চেষ্টা করছি উদ্ভিদ একে অপরের সঙ্গে শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে কিনা। যেমন, যদি কোনো গাছ খরায় আক্রান্ত হয়, তাহলে আশেপাশের গাছগুলোর কাছে সংকেত পাঠিয়ে সতর্ক করতে পারে কি না।”

তিনি আরও জানান, “এই প্রশ্নগুলো উত্তেজনাপূর্ণ। উদ্ভিদ যদি শব্দের মাধ্যমে কোনো সতর্কতা ছড়িয়ে দেয়, তাহলে সেটা প্রাণীদের মধ্যে সংকেত হিসেবেই কাজ করতে পারে।”

গবেষকরা অবশ্য স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, গাছ শব্দ তৈরি করে সচেতনভাবে নয়, বরং এটি তাদের শারীরিক প্রতিক্রিয়ার ফল। তবে এই শব্দই অন্য প্রাণীর কাছে তথ্যবাহী সংকেত হিসেবে কাজ করে।

পরীক্ষার সময় গবেষকেরা লক্ষ্য করেন, সাধারণত স্ত্রী পতঙ্গ টমেটো গাছে ডিম পাড়ে, যাতে সেখান থেকে লার্ভা বেরিয়ে উদ্ভিদ খেয়ে বেড়ে উঠতে পারে। তবে শব্দ সংকেতে যখন গাছ তার দুরবস্থার কথা জানায়, তখন পতঙ্গ সেসব গাছে ডিম দেয় না।

অধ্যাপক হাদানির মতে, “যদি উদ্ভিদ এসব শব্দ সৃষ্টি করে প্রকৃত উপকার পায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও উচ্চমাত্রায় বা নতুন শব্দ সৃষ্টি করতে পারে। একইসঙ্গে, প্রাণীর শ্রবণক্ষমতাও বিকশিত হতে পারে এসব সংকেত ভালোভাবে বুঝে নিতে।”

এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রকৃতিতে গাছ ও প্রাণীর মধ্যে একটি অদৃশ্য, জটিল এবং শব্দভিত্তিক যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে, যা এখনও পুরোপুরি আবিষ্কৃত হয়নি। এই ক্ষেত্রটি বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করছে।

সূত্র: কৃষি গবেষণা সেবা

নিউজটি শেয়ার করুন

উদ্ভিদের গোপন শব্দে সাড়া দেয় পতঙ্গ ও প্রাণীরা: গবেষণায় উদ্ভিদের ভাষার রহস্য উদঘাটন

আপডেট সময় ০৭:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

 

উদ্ভিদও কথা বলে তবে মানুষের মতো নয়, বরং একধরনের সংকেত বা শব্দের মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরেই এ নিয়ে সন্দেহ ছিল বিজ্ঞানীদের মধ্যে, তবে সম্প্রতি ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চাঞ্চল্যকর গবেষণায় উঠে এসেছে, গাছপালা যখন চাপে থাকে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তারা এমন শব্দ সৃষ্টি করে যা পতঙ্গ ও কিছু প্রাণী শনাক্ত করতে পারে। এমনকি এসব সংকেতের ভিত্তিতে পতঙ্গরা সিদ্ধান্তও নেয় কোথায় ডিম দেবে আর কোথায় নয়।

নোবেলজয়ী মার্কিন কৃষি বিজ্ঞানী নরম্যান বোরলগ একসময় বলেছিলেন, “গাছেরা ফিসফিস করে কথা বলে, সে কথা শুনতে হলে তাদের কাছে যেতে হবে।” নতুন গবেষণাগুলো যেন সেই কথারই বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাজির করলো।

তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়োসি ইয়োভেল এবং তার গবেষক দল দেখেছেন, টমেটো গাছ যখন পানিশূন্যতায় ভোগে বা কোনোভাবে চাপের মধ্যে পড়ে, তখন এক ধরনের অশ্রাব্য শব্দ তৈরি করে। এই শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তির বাইরে হলেও অনেক পতঙ্গ, বাদুড় এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী তা শনাক্ত করতে পারে। গবেষকরা লক্ষ করেছেন, এসব সংকেতে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ স্ত্রী পতঙ্গ টমেটো গাছে ডিম পাড়েনি।

অধ্যাপক ইয়োভেল বলেন, “এটাই প্রথম কোনো প্রমাণ যে, প্রাণীরা উদ্ভিদের শব্দের প্রতি সাড়া দেয়। এখন অনুমান করা হচ্ছে, সম্ভবত সব ধরনের প্রাণীই উদ্ভিদের শব্দ শুনে সিদ্ধান্ত নেয় পরাগায়ন করবে কিনা, উদ্ভিদের কাছে যাবে নাকি দূরে থাকবে।”

প্রথমে ধারণা ছিল পতঙ্গরা গাছের আকৃতি বা চেহারার ভিত্তিতে ডিম পাড়ার স্থান নির্ধারণ করে। কিন্তু এই গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা শব্দের প্রতিই বেশি সাড়া দেয়। একটি অসুস্থ বা চাপগ্রস্ত গাছ সেই শব্দ দিয়েই পতঙ্গকে সতর্ক করে দেয় যেন সেখানে ডিম না দেয়।

গবেষণার আরেক সদস্য অধ্যাপক লিলাচ হাদানি বলেন, “আমরা জানতে চেষ্টা করছি উদ্ভিদ একে অপরের সঙ্গে শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে কিনা। যেমন, যদি কোনো গাছ খরায় আক্রান্ত হয়, তাহলে আশেপাশের গাছগুলোর কাছে সংকেত পাঠিয়ে সতর্ক করতে পারে কি না।”

তিনি আরও জানান, “এই প্রশ্নগুলো উত্তেজনাপূর্ণ। উদ্ভিদ যদি শব্দের মাধ্যমে কোনো সতর্কতা ছড়িয়ে দেয়, তাহলে সেটা প্রাণীদের মধ্যে সংকেত হিসেবেই কাজ করতে পারে।”

গবেষকরা অবশ্য স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, গাছ শব্দ তৈরি করে সচেতনভাবে নয়, বরং এটি তাদের শারীরিক প্রতিক্রিয়ার ফল। তবে এই শব্দই অন্য প্রাণীর কাছে তথ্যবাহী সংকেত হিসেবে কাজ করে।

পরীক্ষার সময় গবেষকেরা লক্ষ্য করেন, সাধারণত স্ত্রী পতঙ্গ টমেটো গাছে ডিম পাড়ে, যাতে সেখান থেকে লার্ভা বেরিয়ে উদ্ভিদ খেয়ে বেড়ে উঠতে পারে। তবে শব্দ সংকেতে যখন গাছ তার দুরবস্থার কথা জানায়, তখন পতঙ্গ সেসব গাছে ডিম দেয় না।

অধ্যাপক হাদানির মতে, “যদি উদ্ভিদ এসব শব্দ সৃষ্টি করে প্রকৃত উপকার পায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও উচ্চমাত্রায় বা নতুন শব্দ সৃষ্টি করতে পারে। একইসঙ্গে, প্রাণীর শ্রবণক্ষমতাও বিকশিত হতে পারে এসব সংকেত ভালোভাবে বুঝে নিতে।”

এই গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রকৃতিতে গাছ ও প্রাণীর মধ্যে একটি অদৃশ্য, জটিল এবং শব্দভিত্তিক যোগাযোগব্যবস্থা রয়েছে, যা এখনও পুরোপুরি আবিষ্কৃত হয়নি। এই ক্ষেত্রটি বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা তৈরি করছে।

সূত্র: কৃষি গবেষণা সেবা