স্মৃতির পাতায় বাংলাদেশের আলোচিত বিমান দুর্ঘটনার করুণ অধ্যায়

- আপডেট সময় ০৩:০৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
- / 16
বিমান দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী এক নির্মম বাস্তবতা, যেখানে মুহূর্তেই থেমে যায় বহু প্রাণের স্বপ্নগাথা। বাংলাদেশের আকাশেও ঘটেছে কিছু হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা, যা জাতির স্মৃতিপটে চিরকাল দাগ কেটে গেছে। আজকের প্রতিবেদন তুলে ধরছে সেইসব আলোচিত ও বেদনাদায়ক বিমান দুর্ঘটনার চিত্র।১৯৮৪: ঢাকার আকাশে ট্র্যাজেডি
১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকা অভিমুখী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফকার এফ২৭-৬০০ বিমান পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি এসে বিমানটি একটি জলাভূমিতে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৪ জন ক্রু ও ৪৫ জন যাত্রী—সকলেই প্রাণ হারান। এটি ছিল দেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।

১৯৯৭: কুয়াশার চাদরে ঢাকা সিলেটের আকাশ
২২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭। ৮৫ জন যাত্রী নিয়ে বিজি-৬০৯ ফ্লাইট ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিল। কুয়াশায় ঢাকা সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দৃশ্যমানতা কম থাকায় বিমানটি রানওয়ে থেকে প্রায় ৫.৫ কিলোমিটার দূরে উমাইরগাঁও এলাকার একটি ধানক্ষেতে বিধ্বস্ত হয়। অলৌকিকভাবে প্রাণহানি ঘটেনি, তবে আহত হন ১৭ যাত্রী।
২০০৪: সিলেটে রানওয়ে থেকে ছিটকে খাঁদে
২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর, বিজি-৬০১ ফ্লাইট অবতরণের পর ভেজা রানওয়ের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। ফকার এফ২৮-৪০০০ মডেলের বিমানটি পাশের একটি খাঁদে পড়ে যায়। ৭৯ যাত্রী ও ৪ জন ক্রুর মধ্যে মাত্র ২ জন যাত্রী আহত হন। এতে অল্পের জন্য বড় বিপর্যয় এড়ানো যায়।
২০১৫: পাখির আঘাত ও কার্গো বিমানের ট্র্যাজেডি
২০১৫ সালের আগস্টে দুবাই থেকে আগত বিজি-৫২ ফ্লাইট অবতরণের সময় এক পাখি ডানদিকের ইঞ্জিনে ঢুকে পড়লে ইঞ্জিনের চারটি ব্লেড ভেঙে যায়। বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকলেও, কৌশলী নিয়ন্ত্রণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
তবে, ওই বছরের ৯ মার্চ কক্সবাজারে একটি কার্গো বিমান উড্ডয়নের ৫ মিনিট পর বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলটসহ ৩ জন নিহত হন।

২০১৮: ইউএস-বাংলার নেপাল ট্র্যাজেডি
২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ৬৭ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু বহনকারী এ উড়োজাহাজ থেকে ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। প্রায় ৫০ জনের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হয়। এটি ছিল দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ আন্তর্জাতিক বিমান দুর্ঘটনা।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দুর্ঘটনা
১৯৯১: বাংলাদেশ বিমানের একটি এফ-২৮ বিমান রাজশাহীতে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে।
২০০৭ (১২ মার্চ): বিমানের এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ে।
২০১৫ (২৮ মার্চ): সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বিমানের একটি এয়ারবাস এ-৩১০ দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়।
২০১৬ (৯ মার্চ): ট্রু অ্যাভিয়েশনের আন্তোনভ ২৬-বি মডেলের একটি কার্গো বিমান কক্সবাজার থেকে উড্ডয়নের পরপরই বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। যাত্রী না থাকলেও চার ক্রুর মধ্যে তিনজন নিহত হন।
বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়লেও এসব দুর্ঘটনা প্রমাণ করে, ঝুঁকি এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশেও এমন শোকাবহ দুর্ঘটনাগুলো আজও মানুষের মনে এক ভয়াবহ স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।