উত্ত্যক্তকারীদের রুখতে পরিবার ও সমাজকে হতে হবে সক্রিয়

- আপডেট সময় ০৩:২৫:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
- / 6
আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি? নারীদের হেনস্তা করার প্রতিবাদ করার কারণে সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা ঘটছে। কোথাও কন্যার নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে বাবাকে খুন হতে হচ্ছে, আবার কোথাও মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে বাবা–মা দুজনকেই গুরুতর আহত হতে হচ্ছে।
নিকট অতীতে প্রথম আলোয় নেত্রকোনা, রাজশাহী ও বগুড়ার যে তিনটি সহিংসতার খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা খুবই আতঙ্কের। মঙ্গলবার রাতে নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় নারীদের উদ্দেশে অশ্লীল গান গাওয়াসহ উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় হামলা করা হয়েছে। এতে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হন।
গত ১৬ মে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় স্নাতকের (সম্মান) এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তাঁর মা-বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছেন ধুনট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল মুনছুর আহম্মেদের ছেলে নাফিজ ফয়সাল (আকাশ)। এর প্রতিবাদ করলে নাফিস দলবল নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন।
রাজশাহীতে নিহত আকরাম আলীর স্ত্রী মুক্তি বেগমের ভাষ্য অনুযায়ী, নান্টু নামের এক প্রতিবেশী স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করতেন। একদিন তাঁর স্বামী ওই গৃহবধূকে রক্ষা করতে গেলে নান্টুর গায়ে সামান্য আঘাত লাগে। এর পর থেকে নান্টু তাঁর মেয়েকে উক্ত্যক্ত করতেন। এর প্রতিবাদ করায় তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়েছে।
১২ মে মুন্সিগঞ্জে যাত্রীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক আচরণের অভিযোগে মুন্সিগঞ্জ ঘাটে একটি লঞ্চে ভাঙচুর চালান স্থানীয় লোকজন। ওই সময় লঞ্চের দুই তরুণীকে শত শত মানুষের সামনে মারধর করেন নেহাল আহমেদ ওরফে জিহাদ নামের এক যুবক। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে তিনি জামিনও পেয়ে যান।
বিগত কয়েক মাসে নারীর প্রতি সহিংসতার আরও বহু ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুধু গত এপ্রিলে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৮৯টি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর ৩২ মাসের মধ্যে এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ২০২৪ সালের শেষ চার মাসের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে ১ হাজার ২১৮টি। ২০২৪ সালের শেষ চার মাসে ৫ হাজার ৭৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৩-তে।
যেসব ঘটনায় মামলা হয়, থানা–পুলিশের কাছে কেবল সেই তথ্য থাকে। এর বাইরেও অনেক অঘটন ঘটে এবং অনেক ভুক্তভোগী ভয়ে থানা–পুলিশের কাছেও যেতে চান না। এসব অপরাধ যাঁরা ঘটান, তাঁদের বেশির ভাগই সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া বা শাস্তি পাওয়ার উদাহরণ খুবই কম। ফলে তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
দেশে আইন রক্ষায় এতগুলো বাহিনী আছে। চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযানও। তারপরও নারীর প্রতি নির্যাতন–হেনস্তার ঘটনা মহামারি আকার নিল কীভাবে? নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে, কোনো অপরাধী আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে বের না হতে পারে, সেটাই প্রত্যাশিত। আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সময়ের দাবি।