ঢাকা ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের ৫৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ভাটারায় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় এক যুবককে গ্রেফতার করেছে ডিবি চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোটরসাইকেল ও দেশীয় অস্ত্রসহ পেশাদার ছিনতাইকারী শাকিলকে গ্রেফতার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ যুদ্ধবিরতিতে ফিলিস্তিনিদের ‘না’, প্রস্তাবে যা বলেছে ইসরায়েল ড. ইউনূস বাংলাদেশকে নিপীড়নের ছায়া থেকে বের করে আনছেন তালেবান আর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়, রায় দিল রাশিয়া গুগল এখন অস্ত্র ও নজরদারির জন্য এআই তৈরি করছে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বন্দুকধারীর হামলায় ৫ জন নিহত, ৪ জন আহত — সন্দেহভাজন আটক ইসরায়েল সীমান্তের কাছে হিজবুল্লাহকে হটাতে কাজ করছে লেবানন সেনাবাহিনী সিরিয়ার স্বৈরশাসকের মূল্যবান সম্পদ পাচারে গোপন বিমান মিশন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ: প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:১২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ৫৩৯ বার পড়া হয়েছে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ: প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

 

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক পরিবর্তনের সোপান তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কাজের ধারায় এআইকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চ্যাটবট, ডাটা অ্যানালিটিকস এবং সৃজনশীল কাজ সব ক্ষেত্রেই এআই ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এর ফলে একদিকে কর্মী ছাঁটাইয়ের শঙ্কা যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, এআইয়ের নিরাপত্তা এবং নীতিমালা নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে বিতর্ক এখনও জোরেশোরে চলছে। বিশেষজ্ঞরা এর সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিচ্ছেন।

২০২২ সালের নভেম্বরে ওপেনএআই-এর জিপিটি-৪ বা চ্যাটজিপিটি প্রকাশের পর প্রযুক্তি খাতে এক বিপ্লব ঘটে। এই প্রযুক্তির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে প্রযুক্তি খাতের বাজারমূল্য প্রায় ৫০% বৃদ্ধি পায়। বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ শুরু করে। তবে, বাস্তবে এই কোম্পানিগুলোর অনেকেই এখনও এআইভিত্তিক সফটওয়্যার থেকে প্রত্যাশিত আয় করতে পারছে না।

বিনিয়োগ এবং আয়: বাস্তবতা ও প্রত্যাশা
মাইক্রোসফটের ক্লাউড সেবা অ্যাজুরের মোট রাজস্বের মাত্র ২০% এআই থেকে এসেছে, যা এখনও সীমিত। অন্যদিকে, অ্যালফাবেট এবং অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠান এআই থেকে তাদের আয় প্রকাশ না করলেও বিশ্লেষকদের মতে, তাদের আয় মাইক্রোসফটের তুলনায় কম। বিশ্লেষকদের ধারণা, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হলে এআইভিত্তিক সেবা থেকে আয় আরও বাড়াতে হবে।

জেনারেটিভ এআই-এর সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের প্রসারে এখনও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। ব্যবসা, ব্যাংকিং, পরামর্শ এবং সৃজনশীল শিল্পগুলোতে এর ব্যবহার বাড়লেও এটি এখনও প্রচলিত ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব ঘটাতে পারেনি। অতীতে টাইপরাইটার কিংবা কম্পিউটার যেমন মানুষের কাজের ধরনে আমূল পরিবর্তন এনেছিল, তেমনটাই কি জেনারেটিভ এআই আনতে পারবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
১৮৮৮ সালে টাইপরাইটারের আবির্ভাবের পর এক পর্যবেক্ষক বলেছিলেন, “এই ছোট যন্ত্র দিয়ে একজন মানুষ ছয়জনের কাজ করতে পারে, এবং তাও আরও ভালোভাবে।” পরবর্তীতে কম্পিউটার আরও অনেক প্রশাসনিক কাজ অপ্রাসঙ্গিক করে দেয়, তবে দক্ষ কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে শিক্ষিত তরুণদের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, যার পেছনে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা ছিল।

কখন আসবে এআইয়ের প্রকৃত প্রভাব?
দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, নতুন প্রযুক্তির প্রকৃত প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে প্রায় এক দশক লেগে যায়। যেমন ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ব্যবহার গড়ে তুলতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এক দশকেরও বেশি সময় লেগেছিল। বর্তমানে জেনারেটিভ এআই নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবে রূপ নিতে আরও অন্তত দুই বছর লাগবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বোস্টন কনসালটেন্সি গ্রুপের জরিপ বলছে, এআই-এর সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে আরও সময় প্রয়োজন। অলিভার ওয়াইমানের গবেষণায়ও একই চিত্র উঠে এসেছে—এআই প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত উৎপাদনশীলতায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এআই-এর এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার আশা করা হচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি খাত এবং কর্মজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে, অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এই পরিবর্তনের প্রভাব সম্পূর্ণভাবে অনুভব করতে সময় লাগবে। এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কার্যকর উপায়ে এটি প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে এআই নিরাপত্তা এবং নীতিমালা নিশ্চিত করার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। ভবিষ্যৎই বলে দেবে, এআই প্রযুক্তি আমাদের জীবন এবং কাজের ধরনে কতটা গভীর পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

নিউজটি শেয়ার করুন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ: প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

আপডেট সময় ১২:১২:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫

 

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক পরিবর্তনের সোপান তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কাজের ধারায় এআইকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চ্যাটবট, ডাটা অ্যানালিটিকস এবং সৃজনশীল কাজ সব ক্ষেত্রেই এআই ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এর ফলে একদিকে কর্মী ছাঁটাইয়ের শঙ্কা যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, এআইয়ের নিরাপত্তা এবং নীতিমালা নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে বিতর্ক এখনও জোরেশোরে চলছে। বিশেষজ্ঞরা এর সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিচ্ছেন।

২০২২ সালের নভেম্বরে ওপেনএআই-এর জিপিটি-৪ বা চ্যাটজিপিটি প্রকাশের পর প্রযুক্তি খাতে এক বিপ্লব ঘটে। এই প্রযুক্তির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে প্রযুক্তি খাতের বাজারমূল্য প্রায় ৫০% বৃদ্ধি পায়। বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ শুরু করে। তবে, বাস্তবে এই কোম্পানিগুলোর অনেকেই এখনও এআইভিত্তিক সফটওয়্যার থেকে প্রত্যাশিত আয় করতে পারছে না।

বিনিয়োগ এবং আয়: বাস্তবতা ও প্রত্যাশা
মাইক্রোসফটের ক্লাউড সেবা অ্যাজুরের মোট রাজস্বের মাত্র ২০% এআই থেকে এসেছে, যা এখনও সীমিত। অন্যদিকে, অ্যালফাবেট এবং অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠান এআই থেকে তাদের আয় প্রকাশ না করলেও বিশ্লেষকদের মতে, তাদের আয় মাইক্রোসফটের তুলনায় কম। বিশ্লেষকদের ধারণা, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হলে এআইভিত্তিক সেবা থেকে আয় আরও বাড়াতে হবে।

জেনারেটিভ এআই-এর সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
চ্যাটজিপিটির মতো জেনারেটিভ এআই ব্যবহারের প্রসারে এখনও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি। ব্যবসা, ব্যাংকিং, পরামর্শ এবং সৃজনশীল শিল্পগুলোতে এর ব্যবহার বাড়লেও এটি এখনও প্রচলিত ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব ঘটাতে পারেনি। অতীতে টাইপরাইটার কিংবা কম্পিউটার যেমন মানুষের কাজের ধরনে আমূল পরিবর্তন এনেছিল, তেমনটাই কি জেনারেটিভ এআই আনতে পারবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
১৮৮৮ সালে টাইপরাইটারের আবির্ভাবের পর এক পর্যবেক্ষক বলেছিলেন, “এই ছোট যন্ত্র দিয়ে একজন মানুষ ছয়জনের কাজ করতে পারে, এবং তাও আরও ভালোভাবে।” পরবর্তীতে কম্পিউটার আরও অনেক প্রশাসনিক কাজ অপ্রাসঙ্গিক করে দেয়, তবে দক্ষ কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে শিক্ষিত তরুণদের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, যার পেছনে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা ছিল।

কখন আসবে এআইয়ের প্রকৃত প্রভাব?
দ্য ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, নতুন প্রযুক্তির প্রকৃত প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে প্রায় এক দশক লেগে যায়। যেমন ব্যক্তিগত কম্পিউটারের ব্যবহার গড়ে তুলতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এক দশকেরও বেশি সময় লেগেছিল। বর্তমানে জেনারেটিভ এআই নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবে রূপ নিতে আরও অন্তত দুই বছর লাগবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বোস্টন কনসালটেন্সি গ্রুপের জরিপ বলছে, এআই-এর সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে আরও সময় প্রয়োজন। অলিভার ওয়াইমানের গবেষণায়ও একই চিত্র উঠে এসেছে—এআই প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত উৎপাদনশীলতায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এআই-এর এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার আশা করা হচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি খাত এবং কর্মজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে, অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এই পরিবর্তনের প্রভাব সম্পূর্ণভাবে অনুভব করতে সময় লাগবে। এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কার্যকর উপায়ে এটি প্রয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে এআই নিরাপত্তা এবং নীতিমালা নিশ্চিত করার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। ভবিষ্যৎই বলে দেবে, এআই প্রযুক্তি আমাদের জীবন এবং কাজের ধরনে কতটা গভীর পরিবর্তন আনতে সক্ষম।