কোরবানির আত্মত্যাগে তাকওয়া ও আন্তরিকতার গুরুত্ব

- আপডেট সময় ০৪:১৩:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
- / 5
বিশুদ্ধ ঈমান, আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ও আত্মত্যাগের মহান প্রতীক পবিত্র কোরবানি। এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ মহান আল্লাহর প্রতি তাদের ভালোবাসা, আনুগত্য ও তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় যেমন করেছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)। তিনি আল্লাহর আদেশ পালন করতে গিয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁর এ আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাঈল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি পশু কোরবানির নির্দেশ দেন এবং এই তাকওয়াপূর্ণ আত্মত্যাগ কবুল করেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এসব পশুর গোশত কিংবা রক্ত, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ : ৩৭)। তাই কোরবানির অন্তরসার হওয়া উচিত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে তাকওয়ার সঙ্গে ইবাদত করা।
কিন্তু কিছু কর্মকাণ্ড এমন আছে, যা এই মহৎ ইবাদতের মহিমা বিনষ্ট করে। নিচে সেসব বিষয় তুলে ধরা হলো, যা কোরবানির পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করতে পারে:
হারাম উপার্জনের অর্থে কোরবানি করাঃ কোরবানি পবিত্র ইবাদত, তাই এর জন্য ব্যবহৃত অর্থও হতে হবে হালাল। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা পবিত্র, তিনি শুধু পবিত্র ও হালাল বস্তু গ্রহণ করেন।’ (মুসলিম : ২২৩৬)
লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি করাঃ যেকোনো ইবাদত কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত। রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে তা কবুল হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের ওপর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে ছোট শিরক, আর তা হলো রিয়া।’ (সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব : ৩২)
অহংকার প্রকাশ করাঃ বড় পশু কোরবানি করাই দোষের নয়, তবে অন্যকে তুচ্ছ করে অহংকার প্রকাশ করা ইসলামসম্মত নয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অহংকার করে মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লুকমান : ১৮)
জোরপূর্বক কোরবানির পশু আদায়ঃ কোনো নারীকে যৌতুক হিসেবে কোরবানির পশু দিতে বাধ্য করা কিংবা লোকলজ্জার কারণে উপহার প্রদান করানো একটি নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৮)
লোক-লজ্জায় কোরবানি করাঃ মনের ভেতরে তাকওয়া ও আন্তরিকতা ছাড়া কেবল সামাজিকতার খাতিরে কোরবানি করলে সেটি ইবাদতের মর্যাদা হারায়।
পশুর সঙ্গে নিষ্ঠুরতাঃ ভোঁতা ছুরি দিয়ে জবাই করা, পশুকে অকারণে কষ্ট দেওয়া ইসলামসম্মত নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার ছুরি ভালোভাবে ধারালো করে নেয় এবং পশুকে আরাম দেয়।’ (তিরমিজি : ১৪০৯)
জবাইয়ের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না বলাঃ ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর নাম না নিলে সেই পশুর গোশত হালাল হয় না। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা সেই খাদ্য আহার করো, যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে।’ (সুরা আনআম : ১১৮)
কোরবানির গোশত বা চামড়া বিক্রি করাঃ কোরবানির অংশ হিসেবে গোশত বা চামড়া বিক্রি করা কিংবা কসাইয়ের পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া নিষিদ্ধ। হাদিসে রাসুল (সা.) আলী (রা.)-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন কসাইকে আলাদা পারিশ্রমিক দিতে, কোরবানির অংশ থেকে নয়। (ইবনে মাজাহ : ৩০৯৯)
সুতরাং, পবিত্র কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে কোরবানির গুরুত্ব অনুধাবন করে আন্তরিকতার সঙ্গে তা পালন করার তাওফিক দিন। আমিন।