পারমাণবিক কর্মসূচিতে বড় সিদ্ধান্তর পথে ইরান, সমঝোতার সম্ভাবনা

- আপডেট সময় ০৪:০০:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
- / 5
তেহরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জব্দকৃত অর্থ ছেড়ে দেয় এবং রাজনৈতিকভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে বেসামরিক ব্যবহার নিশ্চিত করে, তাহলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি হতে পারে। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন ইরানের দুই কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র যদি তেহরানের প্রস্তাবিত শর্তগুলো গ্রহণ করে, তাহলে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে পারমাণবিক ইস্যুতে দ্রুত একমত হওয়া সম্ভব। যদিও এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আলোচনা শুরু হয়নি বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।
ইরানের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, যদি এমন কোনো চুক্তি হয়, তাহলে তেহরান এক বছরের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখবে। সেইসঙ্গে ইতোমধ্যে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করা হয়েছে, তার একটি অংশ অন্য দেশে পাঠানো হতে পারে অথবা তা পারমাণবিক জ্বালানিতে রূপান্তর করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের চলমান আলোচনা এখন পঞ্চম ধাপে রয়েছে। আলোচনার এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইকভ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির মধ্যে সম্পর্ক ‘রেড লাইনে’ পৌঁছে গেছে বলেও দাবি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরেনিয়াম কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করাই হতে পারে উত্তেজনা প্রশমনের উপায়।
২০১৫ সালে পারমাণবিক শক্তিধর ছয় দেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন কর্মকর্তারা বারবার বলে আসছেন, ইরানকে অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পথ থেকে ফিরে আসতে হবে। কারণ, এটি ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি নিয়ে গেছে বলে আশঙ্কা ওয়াশিংটনের।
তবে ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ তাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে আসা প্রস্তাবগুলো এখনো আলোচনার টেবিলে আসেনি বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনের একজন কর্মকর্তা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাগেই রয়টার্সের প্রতিবেদনকে পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা করা হবে না।
আরেক ইরানি সূত্র জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে তেহরান কখনোই তাদের পারমাণবিক অবকাঠামো ভাঙতে বা স্থাপনাগুলো সিল করে দিতে রাজি হবে না। তাদের মতে, ট্রাম্পের উচিত হবে ইরানের পারমাণবিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং কাতারে আটকে থাকা ছয় বিলিয়ন ডলারসহ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা তেল বিক্রির অর্থ ইরানকে ফেরত দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে জো বাইডেন প্রশাসনের সময় বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এই অর্থ অবমুক্ত করলেও, তা এখনো কাতারের একটি ব্যাংকে আটকে রয়েছে এবং তেহরান সেটির ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ পায়নি।
সূত্র জানায়, ইরানের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, এই অর্থ যেন কোনো শর্ত বা বিধিনিষেধ ছাড়াই ইরানে পাঠানো হয়। প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে হলেও এই অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি।
সম্প্রতি ট্রাম্প পুনরায় হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল আবারও শুরু করেছেন, যার আওতায় রয়েছে নতুন নিষেধাজ্ঞা এবং ইরানে হামলার হুমকি। আর এমন প্রেক্ষাপটে, ইরানের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে এবং ধর্মীয় শাসন বজায় রাখতে “নতুন চুক্তি ছাড়া আমাদের সামনে আর ভালো কোনো বিকল্প নেই।”