ব্রহ্মপুত্র নদের তাণ্ডবে দেড় শতাধিক বসতভিটা বিলীন, তীব্র ভাঙনে আশ্রয়হীন মানুষ

- আপডেট সময় ০৬:০২:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
- / 1
গত দুই সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙন যেন কিছুতেই থামছে না। প্রতিদিনই বসতভিটা, আবাদি জমি, সড়ক ও স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরে বসবাসকারী শত শত মানুষ হারাচ্ছেন ভিটেমাটি। ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন তারা। দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা ও চিলমারী ইউনিয়নের চর শাখাহাতি এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়দের তথ্যমতে, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে এসব এলাকায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে বহু আবাদি জমি, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সড়কসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাও।
নয়ারহাটের ভাঙনকবলিত মোকলেছুর রহমান, সেকেন্দার আলী ও ফুল মিয়া জানান, কয়েক বছর ধরে তারা চরে বসবাস করছেন। গত বছরও ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছিল, কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবারও একই পরিণতির শিকার হচ্ছেন তারা। চর রক্ষা করে বাসস্থান টিকিয়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন এসব ভুক্তভোগী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, নদীর পানি একটু কমলেই ভাঙন শুরু হয়। গত কয়েকদিনে শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। তিনিও নিজের বাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। তার ভাষায়, “আমরা ৩০ বছর ধরে এই চরে বসবাস করছি। এখন ভাঙনের কারণে চর ছেড়ে অন্য চরে যেতে হচ্ছে।”
চর শাখাহাতি গ্রামেও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অর্ধ শতাধিক ঘর নদীতে চলে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ মিয়া, হারুন মিয়া ও সবুর আলী জানান, ৩৫ বছর ধরে এই গ্রামে বসবাস করছেন তারা। চলতি বছরের ভয়াবহ ভাঙনে গ্রামটি মানচিত্র থেকেই মুছে যেতে বসেছে। অবশিষ্ট বসতভিটা, জমি ও স্কুল-কলেজও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রম ও চাঁদা তুলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হচ্ছে।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, এখনকার ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙনের বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে রোববার সরাসরি আলোচনা হবে।
তবে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, চর শাখাহাতিতে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হবে। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। নয়ারহাট এলাকার ভাঙনের খবর তার জানা ছিল না বলে জানান তিনি।