ভিসা সংকটে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাত্রী কমেছে, কমেছে রাজস্ব আয়

- আপডেট সময় ০৭:৪২:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
- / 2
ভিসা জটিলতার কারণে দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা ও পর্যটকরা। পাশাপাশি এতে কমেছে সরকারের রাজস্ব আয়ও।
হিলি ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ভ্রমণসহ নানা কারণে প্রতিদিন এই চেকপোস্ট দিয়ে গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ যাত্রী যাতায়াত করতেন। ভারতের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ভালো হওয়ায় কলকাতা, চেন্নাইসহ বিভিন্ন গন্তব্যে উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে হিলি অন্যতম জনপ্রিয় রুট ছিল।
কিন্তু ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ভারতের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ভারতীয় হাইকমিশন। এরপর থেকে কেবল যাদের মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসা ছিল, তারাই সীমিত পরিসরে যাতায়াত করতে পারছেন। বিজনেস ও টুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা।
আমদানিকারক মাহবুব রহমান বলেন, “আমরা আগে ভারতে গিয়ে পণ্য দেখে কিনতাম। এখন ছবি দেখে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে গুণগত মান যাচাই করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি খৈল আমদানি করে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছি। ভারতীয় প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সমাধান করতে হয়েছে। প্রতিটি আমদানিকারকই এখন এমন সমস্যায় পড়ছে।”
আরেক ব্যবসায়ী নুর ইসলাম বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পর ভারত বিজনেস ভিসা দিচ্ছে না। ফলে চোখে না দেখে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে, এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছি। ভারত সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, দ্রুত বিজনেস ভিসা চালু করা হোক।”
ভিসা বন্ধের প্রভাব পড়েছে সাধারণ ভ্রমণপিপাসুদের ওপরও। সুফিয়া নামের এক যাত্রী বলেন, “আমার আত্মীয়স্বজন ভারতে থাকে। দেখা করতে বা বেড়াতে যেতে পারছি না। অথচ ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে আসছে। এটি আমাদের সঙ্গে বৈষম্য।”
চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া সুমন বলেন, “আমার দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। ভিসা না পেয়ে চিকিৎসায় বিলম্ব হয়েছে। অনেক কষ্ট করে চার মাস পর ভিসা পেয়েছি।”
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ জন যাত্রী যাতায়াত করছেন, যেখানে আগে এই সংখ্যা ছিল ৬৫০-৭০০ জন। তার মধ্যে ৮০ শতাংশই ভারতীয় নাগরিক। আগস্ট ২০২৩ থেকে এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত যাত্রী পারাপার হয়েছে ৭০ হাজার ৩৪৬ জন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, আগে প্রতিদিন ২.৫ থেকে ৩ লাখ টাকা ভ্রমণকর আদায় হতো। এখন তা নেমে এসেছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। তিনি আশা করেন, ভারত ভিসা চালু করলে যাত্রী সংখ্যা এবং রাজস্ব আদায় আবার বাড়বে।