অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

- আপডেট সময় ১০:১১:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / 4
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রণীত সাম্প্রতিক আইনসমূহ দেশের নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গতকাল বুধবার (২১ মে) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি কঠোর সংশোধনী এনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর “অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা” জারি করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় দলটির সভা-সমাবেশ, প্রকাশনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমর্থনে কোনো বক্তব্য প্রদান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ জানায়, সরকারের এমন পদক্ষেপ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের উদ্দেশ্যেই নয়, বরং এটি দলটির সমর্থকদের বাকস্বাধীনতাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী দল এবং এর একটি বৃহৎ সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গুমবিরোধী একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা হলেও তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে না। অতীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারে সংঘটিত গুমের ঘটনাগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই আইন যথেষ্ট নয়।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “গুমবিরোধী প্রস্তাবিত আইন শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত শত শত গুমের শিকার পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
সংস্থাটি আরও জানায়, গত ১৫ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতারা যেসব অপরাধে অভিযুক্ত, সেগুলোর বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। তবে বিচার প্রক্রিয়া বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে, যার মাধ্যমে দলটিকে কার্যত রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে দলটির পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রচারণা, সভা, মিছিল, সংবাদ সম্মেলন, অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ আরো জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও দল বিলুপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।
নতুন আইনে “সংগঠন” শব্দটির সংজ্ঞা অত্যন্ত বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যার ফলে রাজনৈতিক দল, তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমনকি দলটির সমর্থনে যারা কথা বলেন, তারাও আইনের আওতায় আসবেন। এটি সংগঠনের স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
সংস্থাটি স্পষ্ট করে বলেছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত অপরাধের ন্যায়বিচার হওয়া জরুরি হলেও, একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে মত প্রকাশ কিংবা কার্যকলাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এটি পূর্ববর্তী শাসনামলে বিরোধী দলগুলোর ওপর চালানো দমন-পীড়নেরই নতুন রূপ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।