প্রচণ্ড গরমে শিশুর যত্ন: ভুল করলে হতে পারে বিপদ!

- আপডেট সময় ০৪:০৪:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫
- / 4
বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গরমের প্রকোপ দিনে দিনে বেড়েই চলছে। জুন-জুলাই মাসে প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরম শিশুদের জন্য হয়ে ওঠে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং তাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও কম। তাই এই গরমে শিশুর যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সামান্য অবহেলাতেই ঘটতে পারে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন), ঘামাচি, ত্বকের সমস্যা কিংবা সংক্রমণ।
এই নিবন্ধে আলোচনা করা হবে প্রচণ্ড গরমে শিশুর যত্ন নেওয়ার কিছু জরুরি দিক, সাধারণ ভুলগুলো এবং করণীয়।
কেন শিশুরা গরমে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা: শিশুদের শরীরে ঘামগ্রন্থি পুরোপুরি বিকশিত না হওয়ায় তারা সহজে ঘামতে পারে না। ফলে শরীরের অতিরিক্ত তাপ বের হয়ে যেতে পারে না এবং তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
পানিশূন্যতার আশঙ্কা বেশি: গরমে শিশুদের শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে।
সংক্রমণ ও ঘামাচির ঝুঁকি: ত্বক সংবেদনশীল থাকায় গরমে ঘামাচি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা র্যাশ দেখা দিতে পারে।
প্রচণ্ড গরমে শিশুর যত্নে কী কী ভুল এড়িয়ে চলবেন?
১. ঘন ঘন বাইরে বের করা: অনেক সময় অভিভাবকরা শিশুদের প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে নিয়ে যান। প্রচণ্ড রোদে শিশুদের বাইরে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। এতে হিটস্ট্রোক বা ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
২. ঘন-ভারি কাপড় পরানো: অনেক সময় অভিভাবকরা শিশুকে গরমেও মোটা জামা পরিয়ে রাখেন, যাতে সে ঠাণ্ডা না লাগে। অথচ গরমে এই অভ্যাস শিশুর শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
৩. কম পানি পান করানো: অনেক শিশু পানি খেতে চায় না বা ভুলে যায়। তবে গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে ও ডিহাইড্রেশন এড়াতে পর্যাপ্ত পানি পান করানো জরুরি।
৪. ঘামাচি বা র্যাশকে অবহেলা করা: অনেকেই মনে করেন ঘামাচি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু অবহেলায় তা ফাঙ্গাল ইনফেকশনে পরিণত হতে পারে।
কীভাবে যত্ন নেবেন?
১. শিশুকে ঠাণ্ডা পরিবেশে রাখুন: ঘরের জানালা খোলা রাখুন, প্রয়োজনে ফ্যান বা এসি ব্যবহার করুন। তবে সরাসরি ঠাণ্ডা বাতাস যেন শিশুর শরীরে না লাগে, তা খেয়াল রাখতে হবে। সন্ধ্যার পর ঘর ঠাণ্ডা হলে জানালা খুলে রাখলে ভালো বায়ুচলাচল হয়।
২. হালকা, সুতির পোশাক পরান: সাদা বা হালকা রঙের, ঢিলেঢালা সুতির পোশাক শিশুর জন্য সবচেয়ে ভালো। এটি ত্বককে শ্বাস নিতে সাহায্য করে এবং ঘাম কমায়।
৩. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দিন: যতবার সম্ভব পানি খাওয়ান। ছোট শিশুদের জন্য বুকের দুধই যথেষ্ট তরল সরবরাহ করতে পারে। বড় শিশুদের ডাবের পানি, ফলের জুস, লেবুর শরবত দেওয়া যেতে পারে।
৪. দুপুরে রোদে বের না করুন: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদ সবচেয়ে তীব্র থাকে। এই সময় শিশুকে বাইরে নেওয়া একেবারেই অনুচিত। জরুরি প্রয়োজনে ছাতা, হ্যাট ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।
৫. ত্বকের যত্ন নিন: শিশুর শরীরে ঘাম জমে থাকলে তা পরিষ্কার করে নিন। প্রতিদিন অন্তত একবার ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করান। ঘামাচির সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রাকৃতিক বা শিশুদের জন্য উপযুক্ত লোশন ব্যবহার করুন।
কিছু বাড়তি টিপস
১. শিশুর ঘুমানোর বিছানা পরিষ্কার ও হালকা রাখুন।
২. মশারী ব্যবহার করুন, তবে ঘাম জমার আশঙ্কা থাকলে খেয়াল রাখুন।
৩. টিভি বা মোবাইল ব্যবহারের সময় সীমিত করুন, কারণ এগুলোর আলো ও তাপও শিশুকে বিরক্ত করতে পারে।
৪. বাইরে থেকে এলে বা খেলাধুলা শেষে শরীর ধুয়ে পরিষ্কার করে দিন।
প্রচণ্ড গরমে শিশুদের যত্ন নেওয়া একদিকে যেমন প্রয়োজন, অন্যদিকে এটি অবহেলার শিকারও হয়ে থাকে। সামান্য অসাবধানতায় শিশুর স্বাস্থ্যের বড় ক্ষতি হতে পারে। অভিভাবকদের উচিত গরমের মৌসুমে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা এবং শিশুদের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা। মনে রাখবেন, আপনার সচেতনতাই পারে শিশুর স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে।