লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্পের অভিবাসন অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল জনতা, জারি কারফিউ

- আপডেট সময় ১২:০২:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
- / 15
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে অভিবাসন বিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে টানা পাঁচ দিনের বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে শহরের কেন্দ্রস্থলে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেয়া এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাজ্যের ডেমোক্রেটিক গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম সরাসরি প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি এই সামরিক হস্তক্ষেপকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন।
বিক্ষোভ চলাকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর চার হাজার সদস্য ও ৭০০ মেরিন মোতায়েন করা হয়েছে, যদিও মেরিন সেনাদের মাঠে সরাসরি উপস্থিতি এখনো দেখা যায়নি। রাজ্য প্রশাসনের আপত্তি সত্ত্বেও ফেডারেল সরকারের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।
গভর্নর নিউসাম এই সামরিক সহায়তার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছেন যাতে অভিবাসন কর্মকর্তাদের সহায়তা বন্ধ করা হয়। যদিও আদালত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রেখেছে, ফলে আপাতত ফেডারেল প্রশাসনের অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, “এই ধরনের সামরিক উপস্থিতি জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে এবং রাজ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে। ক্যালিফোর্নিয়া শুধু শুরু, এটি দ্রুত অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়বে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। জানানো হয়, রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ডাউনটাউনের এক বর্গমাইল এলাকায় কারফিউ কার্যকর থাকবে। এই এলাকাতেই শুক্রবার থেকে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল।
পুলিশপ্রধান জিম ম্যাকডনেল জানান, “শনিবার থেকে বিক্ষোভের নামে সহিংসতা বেড়ে গেছে। শহরকে সুরক্ষিত রাখতে কারফিউ অত্যন্ত জরুরি।” তবে এই কারফিউর আওতার বাইরে থাকবে স্থানীয় বাসিন্দা, গৃহহীন, সাংবাদিক ও জরুরি পরিষেবার কর্মীরা।
মঙ্গলবার রাতে শতাধিক বিক্ষোভকারী পুলিশের বাধা অগ্রাহ্য করে ফেডারেল ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশের হেলিকপ্টার থেকে মাইকিং করে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, পরে দাঙ্গা পুলিশ ঘোড়া ও পায়ে হেঁটে ছত্রভঙ্গ করতে অভিযান চালায়।
এই বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে গত শুক্রবার, যখন অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্মকর্তারা লস অ্যাঞ্জেলেসে কর্মস্থলে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন অভিবাসীকে আটক করে। এর প্রতিবাদে জনতা সড়ক অবরোধ ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ব্যবহার করে।
লস অ্যাঞ্জেলেস ছাড়াও ডালাস, অস্টিন, শিকাগো, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নিউইয়র্কে হাজারখানেক মানুষ অংশ নেয় এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্ন শহরে এখনো আইসিই-এর অভিযান চলমান বলে স্থানীয় সংগঠনগুলো জানিয়েছে।
এ পর্যন্ত মোট ১৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই সহিংস আচরণের দায়ে অভিযুক্ত। দাঙ্গা, লুটপাট, ভাঙচুর ও মলোটোভ ককটেল ছোঁড়ার মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে সাতজন পুলিশ আহত হন এবং দুইজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি বিদ্রোহ হয়, আমি ইনসারেকশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করব।” ফোর্ট ব্র্যাগে দেয়া এক ভাষণে তিনি বিক্ষোভকারীদের ‘পশু’ এবং ‘বিদেশি শত্রু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নাগরিক অধিকার, অভিবাসন নীতি এবং ফেডারেল বনাম রাজ্য প্রশাসনের ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সূত্র: এপি