ঢাকা ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গরমে স্বাস্থ্যের সেরা সঙ্গী বেল: জানুন শরবতের ১০ জাদুকরী উপকারিতা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:১৫:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
  • / 33

ছবি সংগৃহীত

 

 

চলছে বেলের মৌসুম। বাজারে এখন সহজেই পাওয়া যাচ্ছে এই ফল, আর তাই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের সকালের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে বেলের শরবত। এটি শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং নানা অসুখ-বিসুখ দূর করে শরীর রাখে চনমনে ও সুস্থ। পুষ্টিবিদ ও আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, বেল প্রাকৃতিকভাবে এমন কিছু উপাদানে ভরপুর, যা শরীরের জন্য একেবারেই আশীর্বাদস্বরূপ। আসুন জেনে নেই বেলের শরবতের ১০টি জাদুকরী উপকারিতাঃ

১. কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে কার্যকর: বেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো এর ল্যাক্সেটিভ প্রভাব, যা অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত বেল খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর থেকে টক্সিন সহজে বেরিয়ে যায়। এতে মুখে ব্রণ, অ্যালার্জির প্রবণতা এবং বদহজমজনিত গ্যাসের সমস্যাও কমে। ত্বক হয় উজ্জ্বল ও কোমল। দিনে অন্তত একবার পাকা বেল খেলে তিন মাসের মধ্যে হজমের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

২. আলসারের প্রাকৃতিক ওষুধ: যারা পাকস্থলীর আলসারজনিত যন্ত্রণায় ভোগেন, তাদের জন্য বেল হতে পারে চমৎকার সমাধান। এর আঁশজাতীয় অংশ অন্ত্রে সুরক্ষা দেয় এবং অম্লতা কমিয়ে দেয়। পাকা বেলের ফাইবার এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান আলসারের ব্যথা প্রশমনে সহায়তা করে। সপ্তাহে তিনবার বেলের শরবত খেলে অন্ত্রে একটি সুরক্ষামূলক আবরণ তৈরি হয়, যা গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের ঝুঁকি কমায়।

৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: বেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী একটি ফল। পাকা বেলে থাকা মেথানল রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেলের শরবতের পরিবর্তে কাঁচা বেল সরাসরি খাওয়া বেশি উপযোগী। এটি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমায় এবং ডায়াবেটিসজনিত ক্লান্তিও হ্রাস করে।

৪. আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় আরাম: হাড় ও জয়েন্টের ব্যথায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য বেল হতে পারে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক। বেলে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা হাড়ের জয়েন্টে জ্বালাভাব কমায়। বিশেষ করে বাতব্যথা, আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাতের সমস্যায় বেল নিয়মিত খেলে ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং চলাফেরা সহজ হয়। এটি অস্থিসন্ধিগুলোর মধ্যে তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়তা করে।

৫. দেহে শক্তি জোগাতে সহায়ক: গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন শরীর কাহিল হয়ে পড়ে, তখন এক গ্লাস বেলের শরবত হয়ে উঠতে পারে দেহের শক্তির উৎস। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক সুগার, ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম, যা ক্লান্তি দূর করে চটজলদি এনার্জি দেয়। ১০০ গ্রাম বেল প্রায় ১৪০ ক্যালরি শক্তি দেয়, যা শরীরের তাৎক্ষণিক শক্তির ঘাটতি পূরণে সহায়ক। এতে হজমশক্তি বাড়ে এবং দুর্বলতা কমে।

৬. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে: উচ্চ রক্তচাপ এখন এক সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠেছে। বেলের শরবত নিয়মিত পান করলে রক্তে সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে থাকা পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী রাখে এবং ধমনীতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখে। বেল কিডনির কার্যক্ষমতাও বাড়ায়, যা রক্তচাপ হ্রাসে সহায়ক।

৭. ক্যানসার প্রতিরোধে শক্তি জোগায়: বেলের মধ্যে আছে অ্যান্টি প্রলিফেরেটিভ এবং অ্যান্টি মিউটাজেনিক উপাদান, যা কোষ বিভাজনের অস্বাভাবিকতা রোধ করে। ফলে শরীর ক্যানসার প্রতিরোধে আরও সক্ষম হয়ে ওঠে। এটি বিশেষ করে স্তন ক্যানসার ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত বেল খাওয়ার ফলে শরীরে টিউমার কোষ বৃদ্ধির হার কমে যায়।

৮. পানিশূন্যতা দূর করে শরীর রাখে শীতল: গরমে শরীরে ঘাম ও পানিশূন্যতা বেড়ে যায়। বেলের শরবত দেহে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এতে থাকা পলিফেনলস ও প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে আর্দ্রতা বজায় রাখে ও ক্লান্তি দূর করে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি খুবই উপকারী।

৯. হজম শক্তি বাড়ায় ও পাচনক্রিয়া উন্নত করে: বেল হচ্ছে ফাইবারে পরিপূর্ণ একটি ফল, যা অন্ত্রের কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখে। এটি হজমে সহায়ক এনজাইম সক্রিয় করে এবং খাবার দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে গ্যাস, বমি ভাব, ডায়রিয়া কিংবা অম্বলের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিয়মিত বেল খেলে হজম শক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়।

১০. ত্বক ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: বেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ-এর দারুণ উৎস। ফলে এটি ত্বকের কোষ মেরামত করে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে জোরদার করে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি বাড়ায়।

বেল শুধু একটি ফল নয়, এটি প্রকৃতির দেওয়া এক অনন্য উপহার। তাই এই গরমে প্রতিদিন এক গ্লাস বেলের শরবত হোক আপনার স্বাস্থ্যসঙ্গী। এটি শুধু প্রশান্তি দেবে না, বরং শরীর ও মনের যত্নে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

গরমে স্বাস্থ্যের সেরা সঙ্গী বেল: জানুন শরবতের ১০ জাদুকরী উপকারিতা

আপডেট সময় ০১:১৫:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫

 

 

চলছে বেলের মৌসুম। বাজারে এখন সহজেই পাওয়া যাচ্ছে এই ফল, আর তাই স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের সকালের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে বেলের শরবত। এটি শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং নানা অসুখ-বিসুখ দূর করে শরীর রাখে চনমনে ও সুস্থ। পুষ্টিবিদ ও আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, বেল প্রাকৃতিকভাবে এমন কিছু উপাদানে ভরপুর, যা শরীরের জন্য একেবারেই আশীর্বাদস্বরূপ। আসুন জেনে নেই বেলের শরবতের ১০টি জাদুকরী উপকারিতাঃ

১. কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে কার্যকর: বেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো এর ল্যাক্সেটিভ প্রভাব, যা অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত বেল খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীর থেকে টক্সিন সহজে বেরিয়ে যায়। এতে মুখে ব্রণ, অ্যালার্জির প্রবণতা এবং বদহজমজনিত গ্যাসের সমস্যাও কমে। ত্বক হয় উজ্জ্বল ও কোমল। দিনে অন্তত একবার পাকা বেল খেলে তিন মাসের মধ্যে হজমের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

২. আলসারের প্রাকৃতিক ওষুধ: যারা পাকস্থলীর আলসারজনিত যন্ত্রণায় ভোগেন, তাদের জন্য বেল হতে পারে চমৎকার সমাধান। এর আঁশজাতীয় অংশ অন্ত্রে সুরক্ষা দেয় এবং অম্লতা কমিয়ে দেয়। পাকা বেলের ফাইবার এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান আলসারের ব্যথা প্রশমনে সহায়তা করে। সপ্তাহে তিনবার বেলের শরবত খেলে অন্ত্রে একটি সুরক্ষামূলক আবরণ তৈরি হয়, যা গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের ঝুঁকি কমায়।

৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: বেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী একটি ফল। পাকা বেলে থাকা মেথানল রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বেলের শরবতের পরিবর্তে কাঁচা বেল সরাসরি খাওয়া বেশি উপযোগী। এটি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমায় এবং ডায়াবেটিসজনিত ক্লান্তিও হ্রাস করে।

৪. আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় আরাম: হাড় ও জয়েন্টের ব্যথায় যারা ভোগেন, তাদের জন্য বেল হতে পারে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক। বেলে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা হাড়ের জয়েন্টে জ্বালাভাব কমায়। বিশেষ করে বাতব্যথা, আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাতের সমস্যায় বেল নিয়মিত খেলে ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং চলাফেরা সহজ হয়। এটি অস্থিসন্ধিগুলোর মধ্যে তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়তা করে।

৫. দেহে শক্তি জোগাতে সহায়ক: গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন শরীর কাহিল হয়ে পড়ে, তখন এক গ্লাস বেলের শরবত হয়ে উঠতে পারে দেহের শক্তির উৎস। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক সুগার, ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম, যা ক্লান্তি দূর করে চটজলদি এনার্জি দেয়। ১০০ গ্রাম বেল প্রায় ১৪০ ক্যালরি শক্তি দেয়, যা শরীরের তাৎক্ষণিক শক্তির ঘাটতি পূরণে সহায়ক। এতে হজমশক্তি বাড়ে এবং দুর্বলতা কমে।

৬. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে: উচ্চ রক্তচাপ এখন এক সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠেছে। বেলের শরবত নিয়মিত পান করলে রক্তে সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে থাকা পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী রাখে এবং ধমনীতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখে। বেল কিডনির কার্যক্ষমতাও বাড়ায়, যা রক্তচাপ হ্রাসে সহায়ক।

৭. ক্যানসার প্রতিরোধে শক্তি জোগায়: বেলের মধ্যে আছে অ্যান্টি প্রলিফেরেটিভ এবং অ্যান্টি মিউটাজেনিক উপাদান, যা কোষ বিভাজনের অস্বাভাবিকতা রোধ করে। ফলে শরীর ক্যানসার প্রতিরোধে আরও সক্ষম হয়ে ওঠে। এটি বিশেষ করে স্তন ক্যানসার ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত বেল খাওয়ার ফলে শরীরে টিউমার কোষ বৃদ্ধির হার কমে যায়।

৮. পানিশূন্যতা দূর করে শরীর রাখে শীতল: গরমে শরীরে ঘাম ও পানিশূন্যতা বেড়ে যায়। বেলের শরবত দেহে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এতে থাকা পলিফেনলস ও প্রাকৃতিক শর্করা শরীরে আর্দ্রতা বজায় রাখে ও ক্লান্তি দূর করে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি খুবই উপকারী।

৯. হজম শক্তি বাড়ায় ও পাচনক্রিয়া উন্নত করে: বেল হচ্ছে ফাইবারে পরিপূর্ণ একটি ফল, যা অন্ত্রের কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখে। এটি হজমে সহায়ক এনজাইম সক্রিয় করে এবং খাবার দ্রুত ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে গ্যাস, বমি ভাব, ডায়রিয়া কিংবা অম্বলের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিয়মিত বেল খেলে হজম শক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়।

১০. ত্বক ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: বেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ-এর দারুণ উৎস। ফলে এটি ত্বকের কোষ মেরামত করে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে জোরদার করে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি বাড়ায়।

বেল শুধু একটি ফল নয়, এটি প্রকৃতির দেওয়া এক অনন্য উপহার। তাই এই গরমে প্রতিদিন এক গ্লাস বেলের শরবত হোক আপনার স্বাস্থ্যসঙ্গী। এটি শুধু প্রশান্তি দেবে না, বরং শরীর ও মনের যত্নে রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।