রংপুরের তারাগঞ্জে বড়গোলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমানকে পুনরায় দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হন। উত্তেজিত স্থানীয়রা পরে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রাখে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর থেকে প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তাঁর অপসারণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধসহ নানা আন্দোলনের মুখে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তবে বরখাস্তের মেয়াদ ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি নিজ পদে পুনরায় ফিরে আসার দাবি করেন অলিয়ার রহমান। বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে একদল শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী তাঁর প্রবেশে বাধা দেয়। এ সময় তাঁর ছেলে মুয়িজ হোসেন একজন শিক্ষার্থীকে মারধর করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে ইউএনও কার্যালয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু পথে আবারও সংঘর্ষ বাধে, যেখানে সোহাগ হোসেন (২৩), লাভলু মিয়া (৩৪), মোফাজ্জল হোসেন (৫৮), কামাল হোসেন (২৪) ও নুরজাফা আক্তার (২৩) আহত হন।
এ ঘটনার জেরে বেলা ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের অনুসারীরা বরাতি এলাকায় রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে। ফলে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকে গিয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সেনাবাহিনী এসে অবরোধ তুলে দেয়।
আহত সোহাগ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “বিদ্যালয়টিকে পরিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন অলিয়ার রহমান। ২১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে সাতজনই তাঁর আত্মীয়।”
অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক অলিয়ার রহমান বলেন, “আইন অনুযায়ী আমি আবার স্বপদে ফিরেছি। আমার ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু মহাসড়ক কে অবরোধ করেছে, তা আমি জানি না।”
তারাগঞ্জ থানার ওসি সাইদুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।”
স্থানীয়দের মতে, স্কুলের নেতৃত্ব নিয়ে এই উত্তেজনা যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। এখনই প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরি।