ঢাকা ০৮:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘শেখ হাসিনার এ বিচার প্রতিশোধ নয়, ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞা’: চিফ প্রসিকিউটর

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৭:০০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / 3

ছবি সংগৃহীত

 

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে উপস্থাপন করেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “এই বিচার অতীতের কোনো প্রতিশোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রতিজ্ঞা। যেন আর কেউ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণের ওপর নির্যাতন চালাতে না পারে।”

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, একই বছরের ১৪ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে সরকার নির্বিচারে গণহত্যা চালায়, যাতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

দীর্ঘ ছয় মাস ২৮ দিনের তদন্ত শেষে, ২০২৫ সালের ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এর ভিত্তিতেই আজ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হলো।

মূল অভিযোগে রয়েছে গণহত্যা, পরিকল্পিত হত্যা, গুম এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ। মামলার প্রথম বিবিধ কেসে শেখ হাসিনার সঙ্গে সহ-আসামি হিসেবে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর।

আদালতের নির্দেশে এই বিচার কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে, যা দেশে আন্তর্জাতিক মানের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে প্রথমবারের মতো এমন সম্প্রচারের নজির স্থাপন করেছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আশাবাদ জানিয়ে বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই মামলার বিচার দৃশ্যমান হবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই এ বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে এবং আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু রাজনৈতিক বিচারের বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু বাংলাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

‘শেখ হাসিনার এ বিচার প্রতিশোধ নয়, ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞা’: চিফ প্রসিকিউটর

আপডেট সময় ০৭:০০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

 

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে উপস্থাপন করেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “এই বিচার অতীতের কোনো প্রতিশোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রতিজ্ঞা। যেন আর কেউ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে জনগণের ওপর নির্যাতন চালাতে না পারে।”

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, একই বছরের ১৪ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে সরকার নির্বিচারে গণহত্যা চালায়, যাতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

দীর্ঘ ছয় মাস ২৮ দিনের তদন্ত শেষে, ২০২৫ সালের ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এর ভিত্তিতেই আজ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হলো।

মূল অভিযোগে রয়েছে গণহত্যা, পরিকল্পিত হত্যা, গুম এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ। মামলার প্রথম বিবিধ কেসে শেখ হাসিনার সঙ্গে সহ-আসামি হিসেবে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর।

আদালতের নির্দেশে এই বিচার কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে, যা দেশে আন্তর্জাতিক মানের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে প্রথমবারের মতো এমন সম্প্রচারের নজির স্থাপন করেছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আশাবাদ জানিয়ে বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই মামলার বিচার দৃশ্যমান হবে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই এ বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে এবং আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু রাজনৈতিক বিচারের বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু বাংলাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।